চিন্তা করে দেখুন তো, জাকজমকপূর্ণ একটি শহর ! যেখানে একটা সময় লোকের কোলাহল ছিলো, শিশুর কান্নার শব্দ ছিলো, যেখানে উৎসব হতো, হাসি আর চিৎকারের শব্দ ভেসে আসতো সেই শহর আজ শান্ত হয়ে চাপা পড়ে আছে মাটির নীচে । সাথে চাপা দিয়ে রেখেছে এর গল্প-ইতিহাসও !
তুরস্কের আনাতোলিয়ায় প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরানো এমনই এক ভূগর্ভস্থ শহর আবিস্কৃত হয়েছে কিছুদিন আগে । নেভশেহির প্রদেশের এই আবিষ্কারকে বিশ্বের এযাবৎ কালের আবিষ্কৃত বৃহত্তম ভূগর্ভস্থ শহর বলেই ধারনা করা হচ্ছে । তুরস্কের কাপ্পাডোসিয়া অঞ্চলে এর আগেও বহু প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান খুঁজে পাওয়া গেছে । ওই এলাকার মাটির ধরনের জন্যেই ভূগর্ভস্থ শহর তৈরি করা হতো এমন প্রমাণও আগে মিলেছে । কিন্তু সদ্য আবিষ্কৃত শহর আয়তনে বিরাট । নেভশেহির শহরের মেয়র হাসান উনভের বলেছেন, নতুন শহরের সঙ্গে তুলনা করলে এযাবৎ যা পাওয়া গিয়েছিল সেগুলিকে নেহাত রান্নাঘর বলে মনে হচ্ছে ।
ওই অঞ্চলেই রয়েছে আগে খুঁজে পাওয়া মাটির তলার শহর ডেরিনকুইউ । ১৯৬৩সালে আবিষ্কৃত এই শহর দেখতে দলে দলে পর্যটকরাও যান । একটি আবাসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে নতুন শহরের সন্ধান মিলেছে । তুরস্কের সরকার প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে । গত বছরে এমন একটি প্রাচীন শহরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা আঁচ করা গিয়েছিল । উপরিভাগের কিছু নিদর্শন থেকেই প্রত্নতাত্ত্বিকরা আন্দাজ করছিলেন, আরো একটি শহরের সন্ধান মিলতে পারে । কিন্তু এত বড় আকারের আবিষ্কারের জন্য তাঁরাও প্রস্তুত ছিলেন না । প্রাথমিক হিসাবে অন্তত সাত কিলোমিটার সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেছে । কোনো কোনোটি এত প্রশস্ত যে গাড়ি যেতে পারে । অসংখ্য ঘর ও প্রাচীন বস্তুও উদ্ধার করা হয়েছে । খননকাজে জড়িত পুরাতাত্ত্বিকদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, নেভশেহির শহরের তলা দিয়ে কোনো জলের উৎসের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে ।
কাপ্পাডোসিয়া অঞ্চলে আগ্নয়েগিরি-তুল্য পাথুরে মাটি থাকায় সেখানের মাটি খুঁড়ে নির্মাণ করা সহজতর ছিলো । এখানের প্রাকৃতিক দৃশ্যও ওই পাথরের কারণেই নজিরবিহীন । সে কারণেই ইতিহাসের দীর্ঘ সময় ধরেই এই ধরনের ভূগর্ভস্থ শহর নির্মিত হয়েছিল । নেভশেহিরের ডেরিনকুইউ ১৮তলার স্তরবিশিষ্ট শহর । তারই আয়তন প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের থাকার মতো । ডেরিনকুইউ খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর বলে চিহ্নিত হয়েছে । তবে গ্রিস থেকে বিতাড়িত খ্রিস্টানরা এমনকি ১৯২৩সালেও সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল । আরো কিছু এ ধরনের শহর এখানে পাওয়া গেছে যেখানে ধর্মীয় উপাসনাস্থল, ঘোড়াশাল, আবাসন ছিলো । বায়ু চলাচলের ব্যবস্থাও ছিলো । একসময়ে রোমান শাসনে থাকা কাপ্পাডোসিয়ায় এই ধরনের শহর তৈরি ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যায়নি । খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রিক লেখক জেনোফন এই শহরগুলির অস্তিত্বের কথা জানিয়েছিলেন । নতুন শহরটি ইতোমধ্যেই ৪৫ হেক্টর এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে বলে বোঝা গেছে । বিস্তার আরও বেশি হতে পারে বলে পুরাতাত্ত্বিকদের অনুমান । সময়ের দিক থেকেও নতুন শহর সবচেয়ে পুরানো ।